মেনু

স্বাধীনতা এমনই পিতা

এনামুল হক টগর

আমি দিন মজুর,শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোহর আলীর ছেলে রতন,
ছোট ভাই মধু চায়ের দোকানে কাজ করে ক্লান্ত সারাদিন।
বাবা বেঁচে থাকলে আমরা হয়তো লেখাপড়ার সুযোগ পেতাম-
ছোট ভাই নিয়মিত স্কুলে যেতো শিক্ষায় সম্মান ও সুনাম।
আমাদের একদিন ভালো চাকুরি হতো স্বনির্ভর জীবন।
কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রিয়তম পিতা শহীদ হলো বেদনার ক্রন্দন।
বাবার স্বপ্ন ছিল আমরা সুশিক্ষার আদর্শে গড়ে উঠবো গৌরবে,
সোনার মৃত্তিকা ফসলে-ফসলে ভরে উঠবে
নতুন চেতনা ও আগামী মর্যাদা স্বভাবে।
অভাব মুক্ত সংসারের পথ ধরে আমরা হেঁটে যাবো দূর বহুদূর,
ধনী ও দরিদ্রের সারিতে এক সাম্যের মহৎ বন্ধু হবো অধিকারে।
নিরন্তর বাঁশির ধ্বনিতে প্রিয়তম জন্মভূমি প্রশান্ত ছায়া দেবে নতুন,
উজ্জ্বল নদীর বাঁকে ঘামঝরা কৃষাণ-মাঝি গান গাইবে নিপুণ,
নিসর্গ চেতনায় প্রিয়তম বাংলাদেশ
ক্ষুধামুক্ত আনন্দে ভরে উঠবে অশেষ।
রোমাঞ্চিত চিত্রকর্মে কুঁড়িগুলো সমুদয়
ফুল হয়ে ফুটে উঠবে আনন্দ শোভায়!
বৈচিত্রময় বীজের বপনে শস্যগুলো সমৃদ্ধি হবে দৌলত সুধায়।
সুললিত প্রকৃতির শরীরে পাখিরা গান গাইবে সুমধুর সুর।
স্বাধীন বাংলা যেন স্বর্গরাজ্যের
পুষ্প উদ্যানে ভরে যাবে মানবতার দ্বার।
এক শান্তিময় প্রেমে উজ্জীবিত হবে সূর্য
তাঁর নব নব কিরণে প্রাণ উদয় হবে আশ্চর্য
কিন্তু সব ব্যর্থ হয়ে গেলো,সব ব্যর্থ হয়ে গেলো,স্বপ্ন বিফল ক্ষয়।
চারিদিকে দূর্নীতি সন্ত্রাস মাদক গুম খুন লাশ আর লাশ!
পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে শত্রুরা হত্যা করলো ভয়ংকর সন্ত্রাস।
তারপর প্রেমহীন শক্তিধর ঘাতকদের দাপটে আহত,
আর ক্ষত-বিক্ষত হলো দেশ সমাজ জাতি ও মানবতা।
দ্বিধাবিভক্ত সময় যেন যন্ত্রণায় জ্বলে উঠলো দাউ-দাউ দহন,
শুধু আক্রমণ কলহ আর কুটিল কালো অসন্তোষ অশনি,
দূর্যোগ মহামারি দূর্ভিক্ষ আর অভাব অনাটনের দহন।
অসহায় নীরব অপ্রতিবাদের স্বদেশ দাঁড়ায়ে রইলো
অপরিপক্ক শস্যদানা প্রত্যাশাকে বিপন্ন ব্যর্থ করলো!
নিরাপত্তাহীন আঁধারে ডুবে যেতে লাগলো
স্বাধীনতার স্বপ্ন নির্মাণ আর বাসনার নতুন আলো।
স্বাধীনতা বিরোধী কালু মন্ডল এখনও গ্রামের প্রভাবশালী বিত্তবান।
সে যুদ্ধে সময় অনেক টাকা ও সম্পাদ লুট করেছিল আছে প্রমাণ।
তদবীর করে ছেলের নামে মুক্তিযোদ্ধার নিয়েছে সনদ,
চাকুরির জন্য কালু মন্ডলের উত্তরসূরীদের জীবন আজ প্রসন্ন চাঁদ!
কিন্তু আমি দিন মজুর মুক্তিযোদ্ধা মোহর আলীর সন্তান,
সংসারে দাউ দাউ ক্ষুধা আর কঠিন দুঃখ কষ্ট অভাব ও অনটন।
ছোট ভাই কিশোর শ্রমিক দোকানের কর্মচারী,
বীরঙ্গণা বোনটি সেই যে ঘর ছেড়ে চলে গেলো অভুক্ত অনাহারী,
সে আর কোনদিন ফিরে আসেনি,কেউ তার খোঁজও রাখেনি!
শুনেছি সে এক নিষিদ্ধ পল্লীতে জীবন করছে ধারণ !
এই চন্দ্রবতী নদী এই বড়াল এই মেঘনা
এই পদ্মা এই যমুনা ও এই ইছামতি নদী,
এই প্রিয়তম ফসলের মাঠ সবুজ প্রগতি,
এই খানে এই মাটিতে যুদ্ধে সময় বাবা
আর স্বজনের ক্ষত বিক্ষত লাশ পড়েছিল সাজ সাজ আজব।
পাশের শহরে কবি মেহেরুনকে ঘাতকরা গুলি করে হত্যা করলো,
সে স্বাধীনতা বিরোধী শত্রু ও দালালরা এখনো সময়ের কুটিল।
আজ সকালে আবু মিয়ার ছেলে নেশায় মাতাল সবুজ,
মাদকের টাকার প্রয়োজনে মা ও ছোট বোনকে হত্যা করেছে কি অবুঝ।
গতকাল জমি-সংক্রান্ত বিরোধে সংসারে,
ভাই হয়ে ভাইকে খুন করেছে নির্মম নিষ্টুর ।
মাজেদের কিশোর ছেলে সাব্বিরকে অপহরণের পর,
মুক্তিপণের টাকা না দেওয়ার কারণে জের সন্ত্রাসীরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে কি যে যন্ত্রণার।
যৌতুকের টাকার অত্যাচারে প্রতিবেশি অসহায় রাবেয়া,
স্বামীর হাতে নিষ্ঠুরভাবে খুন হয়েছে কি যে করুণ বেদনা অসহায়,
ঈদের জামা কিনে দিতে না পেরে আখের আলী নির্জনে,
তার দুই শিশু সন্তানকে নদীর স্রোতে করুন
অনাদরে ভাসিয়ে দিয়েছে নিষ্ঠুর যন্ত্রণা।
এ-এক নির্মম হৃদয় বিদারক মর্মান্তিক
মৃত্যুর করুন জীবন চিত্র অবাক!
বধির কিশোরী প্রকৃতির ডাকে
স্কুল থেকে পাশের বাড়িতে গেলে একা,
ঘাতক বাড়ির মালিক তাকে জোরপূর্বক
ধর্ষণ করেছে কি যে নিষ্ঠুর অত্যাচার নির্বাক।
কয়েক মাস আগে মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে
স্কুলে যাওয়ার পথে বিপদজনক অসহায়,
সন্ত্রাসীদের হাতে লাঞ্ছিত হলে পিতা প্রতিবাদ করায়,
ঘাতকরা তার মুক্তিযোদ্ধা পিতাকে হত্যা করেছে নির্দয়।
এমন স্বাধীনতা তুমি দিয়েছো পিতা?
এমন স্বাধীনতা তুমি দিয়েছো পিতা?
যুদ্ধের সময়ও মুক্তিযোদ্ধারা ছিল গরীব আসহায় ও ক্ষত-বিক্ষত কিন্তু জীবন ছিল সজিব,
এখনও তাঁরা দরিদ্রই রয়ে গেছে ভীষণ অভাব,
অনাটন আর প্রবল ক্ষুধায় আজব।
তোমার বুকে শুধু জ্বালাও পোড়াও গুম খুন ও ক্রসফায়ার।
আর পেট্রোল বোমায় দগ্ধ ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত লাশ অত্যাচার।
মুক্তিযোদ্ধা গিয়াসের ছেলে রফিক
এখনো নিরুপায় হয়ে রিকসা চালায় বিস্ময় অবাক!
ত্রিশ লক্ষ শহিদ হত্যাকারী ঘাতক দালালরা
এখনো কালো টাকায় প্রবল শক্তিশালী বহুদূর।
কখনো কখনো ওরা দেশের ক্ষমতাধর হয়!গাড়িতে পতাকা উড়ায় কুটিল আঁধার সময়।
এ-যেন পৃথিবীর এক দুঃখ ও বেদনাভরা
বিপন্ন আর বিষণ্ণ ইতিহাস হাহাকার।
মহৎ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মোহর আলীর
ছেলে আমি,হেঁটে যাই,দেশের প্রতি মহৎ বিশ্বাস প্রেম অধিকারে,
আগে ও পিছে ধৈর্য ধারণ করি সুন্দরের অপেক্ষায় সংস্কারে,
মুক্তিযোদ্ধারা অনন্তকালের আর্দশ বীজ বপণকারী উদয় সভ্যতার।
অন্যায় অত্যাচার মাদক ক্যাসিনো সন্ত্রাস
জঙ্গিবাদ আর লুটেরাদের বিরুদ্ধে চাষ
প্রবল প্রতিরোধ প্রতিবাদ সংগ্রাম অশেষ,
পরস্পরা বংশধর বহুদূর কল্যাণ ও সেবার এক পথ বিশেষ।
মুক্তি আর শান্তির বার্তা নিয়ে ছুটে যাই,
ছুটে যাই দূর প্রান্তরে সুদূর যাত্রা অথই ।
ওই আকাশ দিগন্ত নদী মাঠ গ্রাম পেরিয়ে নগর,
লাল সবুজ রক্তে আঁকা জাতীর প্রিয় পতাকা সুন্দর।
দীপ্ত জীবন শান্তির নব নব সংস্কারে
আধুনিক বার্তা নিয়ে অর্থ-মুক্তির।
আনন্দ ও বেদনায় প্রিয় জন্মভূমিকে কানে কানে বলি শোন,
হে বিদগ্ধ প্রিয়তম স্বাধীনতা শোন,
হে ন্যায়-পরায়ণ প্রিয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা শোন!
হে প্রিয়তম মাতৃভূমি,হে প্রিয় জন্মভূমি শোন
এই বাংলাদেশকে নতুন চেতনার আলো দাও আর বলো,
স্বাধীনতা এমনই পিতা,স্বাধীনতা এমনই পিতা।
স্বাধীনতা দেশপ্রেমের মহৎ সাধনার দীপ্ত আলো।
স্বাধীনতা এমনই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা!
স্বাধীনতা এমনই জীবন সুন্দর আনন্দের অশ্রু নয়ন বন্ধু।
আর স্বজন হারানোর গভীর বেদনা ব্যথা মরণ মনোমুগ্ধ।
০৮/০৩/২০২১